চার মূর্তির অভিযান [উপন্যাস]
== এই ব্লগে প্রদর্শিত অপরের রচনাংশ, স্থিরচিত্র বা অলংকরণের কপিরাইট আমাদের নয় । ==
পোস্টের বক্তব্য স্পষ্টতর
করতে এগুলি সাজানো হচ্ছে । কোনও ব্যবসায়িক স্বার্থে নয় ।
‘শিশুসাথী’ পত্রিকার সাধারণ সংখ্যায় ফিরলেন টেনিদা । ধারাবাহিক উপন্যাস # ২ নিয়ে ।
‘চার মূর্ত্তি’-র গোড়াতেই ছিল, “স্কুল ফাইন্যাল্ পরীক্ষা শেষ হয়ে গেল ।”
‘চার মূর্তির অভিযান’ শুরু হয় স্কুল ফাইনাল পাশ করার সমাচার দিয়ে ।
সিটি কলেজ-এর ছাত্র এখন বন্ধু-চতুষ্টয় । ১
লিডার-এর ভাল নাম জানাই ছিল । ২
এই দ্বিতীয় উপন্যাসে প্রথম পাওয়া গেল বাকি তিনজনের নাম ।
সঙ্গে নানারকম তথ্য ।
কমলেশ / প্যালারাম-এর পরিবারে আছেন -
মা, অফিস-যাত্রী বাবা ৩, কোর্ট-গামী বড়দা ৪, ডাক্তারি-পাশ মেজদা ৫, ছোট বোন আধুলি ৬, ছোড়দি ৭, ছোড়দি-র ছাগল গঙ্গারাম ।
পাঠকের পূর্ব-পরিচিত পিসতুতো ভাই ফুচুদা ৮ এবং শক্তিগড়-এর মল্লিকা মাসিমা-র উল্লেখ রয়েছে ।
চুয়িং গাম-প্রীতি ৯, রাষ্ট্রভাষায় স্বাচ্ছন্দ্য ১০, বেপরোয়া মেজাজ ১১ নিয়ে হাজির দলের কনিষ্ঠতম – ক্যাবলা ওরফে কুশলকুমার মিত্র ১২ ।
স্বর্ণেন্দু সেন (হাবুল) বক্সিং শিখেছেন ১৩ । তাঁর ছোটভাই বাবুল ১৪ । তাঁদের মোটর আছে ১৫ ।
টেনিদা-র কুট্টিমামা ইতিপূর্বে দুটি গল্পে নায়ক হয়েছেন ১৬ ।
কিন্তু ‘চার মূর্তির অভিযান’-এ সামনাসামনি তাঁকে দেখে স্তম্ভিত তিন মূর্তি ।
সেই বর্ণনার সঙ্গে বাস্তবের গজগোবিন্দ হালদার-এর কোনো সাদৃশ্যই নেই ।
না চেহারায়, না স্বভাবে ।
চা-বাগানের ছোট ম্যানেজার কুট্টিমামা ।
তাঁর বাবাও এখানে কাজ করতেন ।
‘কুট্টিমামার হাতের কাজ’-এ অবশ্য চাকরি পাওয়ার ভিন্ন কারণ জানা গিয়েছিল ।
‘কুট্টি মামার দন্তকাহিনী’ অনুযায়ী হালদার মশাইয়ের সব দাঁতই বাঁধানো । এখানে মাত্র একটি ১৭ ।
পয়লা উপন্যাস ‘চার মূর্ত্তি’-র সঙ্গে পরিস্থিতিগত কয়েকটি মিল লক্ষ্য করা যায় ।
ঝন্টিপাহাড়-এর মত ডুয়ার্স-এও ক্যাবলা আর প্যালা একই ঘরে থাকেন ।
টেনি এবং হাবুল-এর কক্ষটিতে অবশ্য কুট্টিমামা-ও ।
একত্রে বেড়াতে বেরোলে উদাস, ভাবুক প্যালারাম আগের মতই দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান ।
এখানেও গর্তে পড়েন । সেবারে ভয়ে ঝাঁপ দেন নদীতে । এতে, ডোবার জলে ।
এই নভেলেও রয়েছে প্রতিটি অধ্যায়ের বিচিত্র সব শিরোনাম ১৮ ।
‘ঢাউস’ গল্পে আবিষ্কৃত ‘ডি-লা-গ্রান্ডি মেফিস্টোফিলিস’ সোল্লাস স্লোগান বারবার ফেরে ‘চার মূর্তির অভিযান’-এ ।
সেই সঙ্গে এক আবেগপূর্ণ মুহূর্তে, ‘চার মূর্ত্তি’-র ‘পটলডাঙা জিন্দাবাদ’-ও ১৯ ।
প্রথম উপন্যাসের ‘স্ট্রিম-ট্রিম-ট্রা-লা-লা-লা-লা-’-র এক সংক্ষিপ্ত রূপ এখানেও গেয়ে ওঠেন টেনি শর্মা ২০ ।
পালক দিয়ে প্যালা-র ঘুম ভাঙান ক্যাবলা ।
উপন্যাস # ৩ ‘ঝাউ-বাংলোর রহস্য’-তে হাবুল সেন পেনসিলের সাহায্যে কাজটি সম্পাদন করেন ।
‘চার মূর্ত্তি’ সহ অন্যান্য টেনি-উপন্যাসের সঙ্গে ‘চার মূর্তির অভিযান’-এর একটি প্রধান অমিল আছে ।
এতে নতুন চরিত্র নিতান্তই কম ।
চার বন্ধুর স্বজনদের বাদ দিলে – কুট্টিমামা-র পরিচারক ছোট্টুলাল ২১, চালক দেওয়ান বাহাদুর, কুলি-সর্দার তথা শিকারি রোশনলাল ।
ফ্ল্যাশব্যাকে কুট্টিমামা-র বাবা এবং গাড়োয়ান বীর বাহাদুর ।
খলচরিত্র একটিও নেই । এমনকি টেনি-অপহরণকারী হস্তীটিও আসলে বন দপ্তর-এর পোষা ।
ডুয়ার্স-ভ্রমণে মানুষের পরিবর্তে বিচিত্র না-মানুষী মিছিল ।
হাতি ছাড়াও বাঘ, বাচ্চাসহ চিতা, ভালুক, গোদা বানর, হরিণ, খরগোশ, শজারু, অজগর, কোলা ব্যাঙ, ময়ূর, বক-সদৃশ পক্ষী, বন-মুরগি, প্যাঁচা ।
শাখামৃগ-র উপর ‘নির্মম প্রতিশোধ’ নেওয়ার সংকল্প নেন ভজহরি ।
পরে, একটি ছোটগল্পে, কুট্টিমামা-র বন্ধু রামগিদ্ধড় বাবু নিজেই হনুমানবৃন্দের ‘নিদারুণ প্রতিশোধ’-এর শিকার হন ২২ ।
টেনি-কাহিনিতে প্রিয় সাহিত্য-প্রসঙ্গ প্রায়ই থাকে ২৩ ।
প্যালা তাঁর ডুয়ার্স-যাত্রার ব্যাগ বোঝাই করেন শিবরাম চক্রবর্তী ও হেমেন্দ্র কুমার রায়-এর নতুন বইতে ২৪ ।
দ্বিজেন্দ্রগীতি-র পাশাপাশি আসে ‘হ য ব র ল’ থেকে উদ্ধৃতি ।
ক্যাবলা অবাস্তব গোয়েন্দা গল্পের ভক্ত নন ২৫ ।
তবে প্রেমেন্দ্র মিত্র-র বিচিত্র কিসসায় ‘স্থলাতঙ্ক’-র উল্লেখ তাঁর স্মৃতিতে অম্লান ২৬ ।
পরিশেষে, ‘চার মূর্তির অভিযান’ থেকে তাঁদের দলপতি সম্পর্কে কথক প্যালারাম-এর মূল্যায়ন অবশ্যই উদ্ধৃতিযোগ্য ।
“... টেনিদাকে নইলে আমাদের যে একটি দিনও চলে না । যেমন চওড়া বুক – তেমনি চওড়া মন । হাবুল সেবার যখন টাইফয়েড হয়ে মরো-মরো তখন সারারাত জেগে, নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে টেনিদাই তাকে নার্স করেছে ... লোকের উপকারে এক মুহূর্তের জন্য তার ক্লান্তি নেই ... ফুটবলের মাঠের সেরা খেলোয়াড়, ক্রিকেটের ক্যাপ্টেন । আর গল্পের রাজা । এমন করে গল্প বলতে কেউ জানে না ।” ২৭
‘চার মূর্তির অভিযান’ চিত্রিত করেন শিল্পী সুভাষ সিংহ-রায় ।
‘টেনিদা’ (২০১২) নামে চলচ্চিত্রায়িত হয়েছে এই উপন্যাস ২৮ ।
প্রথম ধারাবাহিক প্রকাশ :
‘শিশুসাথী’, অগ্রহায়ণ ১৩৬৫ - বৈশাখ ১৩৬৭ (ভাদ্র ১৩৬৬ বাদ) ।
ধারাবাহিক উপন্যাসের কিস্তি-সংখ্যা : ১৭
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়-এর যে-সব ছোটদের গ্রন্থে স্থান পেয়েছে (নির্বাচিত তালিকা) :
১) ‘চারমূর্তির অভিযান’, অভ্যুদয় প্রকাশ-মন্দির, আষাঢ় ১৩৬৭ ।
২) ‘চারমূর্তির অভিযান’, গ্রন্থপ্রকাশ, ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ ।
৩) ‘টেনিদার অভিযান’, শৈব্যা প্রকাশন বিভাগ, ২৫ শে বৈশাখ ১৩৮৫ ।
৪) ‘সমগ্র কিশোর-সাহিত্য’, ১ ম খণ্ড, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, ১৯৭৮ ।
চার মূর্তি-র কোন্ কোন্ চরিত্র উপন্যাসে উপস্থিত :
টেনিদা, প্যালা, ক্যাবলা, হাবুল ।
প্রথম প্রকাশিত হেডপীস ও অলংকরণ :
ধারাবাহিক উপন্যাস ‘চার মূর্তির অভিযান’-এর
হেডপীস, ‘শিশুসাথী’, ১৩৬৫ – ১৩৬৭ ।
শিল্পী
।। সুভাষ
সিংহ-রায় । |
‘চার মূর্তির
অভিযান’, ‘শিশুসাথী’, অগ্রহায়ণ ১৩৬৫ ।
শিল্পী
।। সুভাষ
সিংহ-রায় । |
‘চার মূর্তির
অভিযান’, ‘শিশুসাথী’, পৌষ ১৩৬৫ ।
শিল্পী
।। সুভাষ
সিংহ-রায় । |
‘চার মূর্তির
অভিযান’, ‘শিশুসাথী’, পৌষ ১৩৬৫ ।
শিল্পী
।। সুভাষ
সিংহ-রায় । |
‘চার মূর্তি’ (শৈব্যা সংস্করণ) গ্রন্থে প্রকাশিত ‘চার মূর্তির অভিযান’-এর বিজ্ঞাপন । |
___________________________________________________________________________________
১ = অধ্যায় ১২-তে প্যালা লেখেন তাঁদের বাংলা প্রফেসর-এর কথা ।
১৯৪৫ – ১৯৫৫ সিটি কলেজ-এর অধ্যাপক ছিলেন নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় স্বয়ং ।
অর্থাৎ ‘চার মূর্তির অভিযান’ রচনার বছর তিনেক আগে ।
২ = ‘ভজহরি ফিলম কর্পোরেশন’ থেকে ।
সেখানে কিন্তু প্যালা-র নাম ছিল কমলেশ-এর বদলে প্যালারাম বন্দ্যোপাধ্যায় ।
পরে, ‘টেনিদা ও সিন্ধুঘোটক’-এ টেনিদা ভুল করে স্বর্ণেন্দু ব্যানার্জি নামে তাঁর পরিচয় দেন ।
স্বর্ণেন্দু সেন প্রকৃতপক্ষে হাবুল ।
৩ = ইতিপূর্বে টেনি-হীন ‘অথ নিমন্ত্রণ ভোজন’-এ ছিল প্যালারাম-এর পিতা-র কথা ।
দ্রষ্টব্য : ‘খট্টাঙ্গ ও পলান্ন’ -
http://tenida-treasury.blogspot.in/2016/11/Khattaanga-O-Palaanna.html
৪ = ‘সাংঘাতিক !’, তৎপূর্বে টেনিদা-হীন ‘চরণামৃত’ গল্পেও আছে বড়দা-প্রসঙ্গ ।
৫ = ‘অথ নিমন্ত্রণ ভোজন’ অনুসারে মেজদা-র নাম ন্যালা ।
টেনি-কাহিনির ক্ষেত্রে ‘একটি ফুটবল ম্যাচ’-এ প্রথম তাঁর উল্লেখ ।
৬ = ‘অথ নিমন্ত্রণ ভোজন’ গল্পে প্যালা-র ছোট বোন আনি । ‘চরণামৃত’-তে ঝন্টি ।
‘চার মূর্তির অভিযান’-এর অধ্যায় ১২ অনুযায়ী ছোট বোন আছেন দু’জন ।
৭ = ‘ঝাউ-বাংলোর রহস্য’-তে ফেরেন ছোড়দি ।
৮ = দ্রষ্টব্য : ‘ঢাউস’ -
http://tenida-treasury.blogspot.in/2016/12/Dhaaush.html
৯ = ‘ঢাউস’-এ প্রথম আছে চুয়িং গাম-কথা ।
বর্তমান উপন্যাসে টেনিদা-র মতে চুয়িং গাম-এর স্বপ্ন দেখেন ক্যাবলা (অধ্যায় ৩) ।
১০ = ছোটবেলায় ক্যাবলা-র পশ্চিমে থাকার খবর প্রথম জানা যায় ‘চামচিকে আর টিকিট চেকার’ থেকে ।
১১ = চার মূর্তি-র চারটি উপন্যাসেই ক্যাবলা-র সাহস ও উপস্থিত বুদ্ধি সবচেয়ে বেশি ।
ভূত, বাঘ বা ভিলেন – কোনো ভয়ই তাঁকে কাবু করে না ।
১২ = অধ্যায় ২, ১৬-তে রয়েছে ক্যাবলা-র পুরো নাম ।
১৩ = অধ্যায় ১৫ ।
১৪ = অধ্যায় ১৪ ।
১৫ = অধ্যায় ১ । গাড়ি চালাতেও জানেন হাবুল (‘গজকেষ্ট বাবুর হাসি’) ।
১৬ = ‘কুট্টিমামার হাতের কাজ’, ‘কুট্টি মামার দন্তকাহিনী’ ।
‘হালখাতার খাওয়া-দাওয়া’, ‘দি গ্রেট্ ছাঁটাই’-তেও ছিল তাঁর প্রসঙ্গ ।
১৭ = অধ্যায় ১০ ।
১৮ = অধ্যায় ৭, ৮, ১৪, ১৫ বাদে ।
১৯ = অধ্যায় ১১ ।
২০ = অধ্যায় ১০ ।
২১ = ‘কুট্টিমামার হাতের কাজ’-এ ছিলেন রামভরসা ।
২২ = ‘নিদারুণ প্রতিশোধ’ ।
২৩ = দ্রষ্টব্য : ‘ব্রহ্মবিকাশের দন্তবিকাশ’ -
http://tenida-treasury.blogspot.in/2016/12/Brahmabikasher-Dantabikaash.html
২৪ = অধ্যায় ১ ।
তার মধ্যে চক্রবর্তী মহাশয়ের একটি পুস্তক ছিল ‘জুতো নিয়ে জুতোজুতি’ (অধ্যায় ৬) ।
শিবরাম-এর গ্রন্থ তালিকায় ‘চটির সঙ্গে চটাচটি’ থাকলেও, এই শিরোনামটির কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি ।
(‘শিবরাম চক্রবর্তীর বই-তালিকা’, সংকলন : দেবাশিস মুখোপাধ্যায়, ‘শিরোনাম শিবরাম’, কোরক, ২০০৮ ।)
২৫ = ‘ঝাউ-বাংলোর রহস্য’, ‘টেনিদা ও সিন্ধুঘোটক’ ।
২৬ = অধ্যায় ৫ ।
প্রাসঙ্গিক কাহিনীটি প্রেমেন্দ্র-প্রণীত ‘বিশ্বম্ভর বাবুর বিবর্ত্তন-বাদ’ (১৩৪৫) ।
‘বিশ্বম্ভর বাবুর
বিবর্ত্তন-বাদ’, প্রেমেন্দ্র মিত্র, ‘ছোটদের মাধুকরী’, ১৩৪৫ । শিল্পী ।। যতীন সাহা । |
২৭ = অধ্যায় ১১ ।
পাশাপাশি মনে পড়বে, বস্তিতে আগুন লাগলে, টেনিদা-ই একটি বাচ্চাকে পাঁজাকোলা করে বাইরে নিয়ে এসেছিলেন (‘ঝাউ-বাংলোর রহস্য’) ।
২৮ = পরিচালক : চিন্ময় রায় ।
ছায়াছবিটি দেখা যাবে এই লিঙ্কে : https://youtu.be/-mH5LkdH14A
___________________________________________________________________________________
4 comments:
বাহ, তথ্যে তথ্যে ভরপুর
অশেষ ধন্যবাদ অর্ণব !
Brilliant stuff.
Thanks a million !
Welcome to 'Tenida Treasury'.
Post a Comment